শ্রীবরদী নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম
অটোকল। স্থানীয় নাম। টিউবওয়েল বা কোন যন্ত্র লাগে না। প্রয়োজন নেই বিদ্যুৎ কিংবা ডিজেল। ৫ ফিট গভীরতায় দেড় ইঞ্চি একটি পাইপ বসালেই অঝোর ধারায় বের হতে থাকে পানি। তাও পরিস্কার, স্বচ্ছ ও আর্সেনিক মুক্ত সুস্বাধূ। খরচ পড়ে ১ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা। আর এ পানি দিয়েই খাবার পানির চাহিদা সহ চাষবাদে বিপুল পরিবর্তন এনেছে শ্রীবরদীর সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় এলাকার ৩ গ্রামের।
জানা গেছে, শ্রীবরদী উপজেলার রানীশিমুল ইউনিয়নের ভারতীয় কুলঘেষে পাহাড়িগ্রাম খাড়ামোড়া, বালিজুরি ও অফিসপাড়া। এ অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পাথরযুক্ত। তাই স্বাভাবিক ভাবেই এ অঞ্চলে কোন গভীর বা অগভীর নলকুপ বসানো সম্ভব হয়নি। দীর্ঘদিন থেকে এ ৩ গ্রামের লোকজন পাহাড়ি ঝরনা ও নদী থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করতো। আর তা থাকতো ময়লাযুক্ত। পানির অভাবে অনাবাদি পড়ে থাকতো কয়েক হাজার একর জমি। কিন্তু সম্প্রতি স্থানীয় ভাবে অটোকল ব্যবহার করে পাহাড়ি ৩ গ্রামের মানুষের খাবার পানির সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি এ অটোকলের পানি ব্যবহার করে বোরো আবাদ করা হয়েছে প্রায় ৭‘শ একর জমি। সরজমিনে ৩ গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে প্রায় পরিবারেই স্থাপন করা হয়েছে অটোকল। খাবার, রান্নাবান্না, গোসল সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার হচ্ছে এ কলের পানি। পতিত থাকা জমিতে এ অটোকল স্থাপন করে বোরো আবাদ করা হয়েছে প্রায় ৭‘শ একর জমি। কথা হয় কৃষক আমিনুল, রনজু, , মনজু, মুকুট, সামাদ আলী, রফিকুল সহ অনেকের সাথে। তারা জানায়, এ অঞ্চলে কোন নলকুপ বসানো যায় না। আগে পাহাড়ি ঝর্ণার পানি দিয়ে আমরা খাবার পানির চাহিদা পুরণ করতাম। কিন্তু পাহাড়ে ইউক্যালিপটাস ও একাশি গাছের বনায়ন করার পর পাহাড় মরুভূমি হয়ে গেছে। পাহাড় থেকে বের হওয়া অসংখ্য ঝরনাও মরে গেছে। এতে আমাদের তীব্র পানি সংকটে পরতে হয়। কিন্তু কয়েক বছর ধরে এ অটোকল আবিষ্কারের ফলে আমাদের পানির কষ্ট দূর হয়েছে। এ পানি দিয়ে আমরা আবাদও করতে পারছি। পাহাড়ি অধিবাসী রফিকুল ইসলাম জানান, এখনও অনেক জমি অনাবাদী পড়ে আছে। সরকার যদি এ অনাবাদি জমিতে এ ধরনের অটোকলের ব্যবস্থা করতো তাহলে এ এলাকার দরিদ্র কৃষকরা উপকৃত হতো। অটোকল মিস্ত্রি মোজাফ্ফর আলী জানান, একেকটি অটোকল স্থাপনে খরচে পড়ে ১ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা। ৪০ থেকে ৬০ ফিট পর্যন্ত বর্ডিং করে পাইপ উঠিয়ে ফেলে উপরে শুধুমাত্র ৫ ফিট পাইপ রেখে তৈরী করা যায় এ অটোকল। তিনি জানান এ ৩ গ্রামে প্রায় দেড় শতাধিক অটোকল রয়েছে। শ্রীবরদী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ আজিজুল হক জানান, অটোকলের সাহায্যে উপজেলার সীমান্তবর্তী অঞ্চলের ৩ গ্রামের বেশ জমি আবাদের আওতায় এসেছে। যা আমাদের কৃষির জন্য পজেটিভ।
এ ব্যাপারে শ্রীবরদী উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মোঃ মোতালেব হোসেন জানান, ওই অঞ্চলের পাশে পাহাড় রয়েছে। পাহাড়ের পানির স্তর উচুতে থাকায় সমতলে শুধু ছিদ্র করেই পানি উঠানে যাচ্ছে। পাহাড়ের মাঝামাঝি পানি রিজার্ভ করে পাইপ লাইনে ওয়াটার সাপ্লাই প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে এ পানির সুষ্ঠু ব্যবহার সম্ভব।

0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন