রোম্মান আরা পারভীন:
অজোপাড়া গায়ে নির্মল বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তুলেছেন দেওয়ানগঞ্জের পঞ্চাশোর্ধ এরশাদ আলী। নাম দিয়েছেন ‘এরশাদ গার্টেন।’ স্বপ্ন বড় কিছু করার। সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়নে লালন পালন করছেন বিভিন্ন দূলর্ভ গাছপালা। নিজের সন্তানের চেয়েও বেশি নজর সেদিকে। পালন করছেন বেশ কিছু পশু পাখি। পর্যটকদের দেখার জন্য তৈরী করেছেন বাঁশ কাঠ দিয়ে ওয়াচ টাওয়ার। রয়েছে নানা ফুলের সমাহার।
এরশাদ আলী। সীমান্তবর্তী গ্রামের মানুষ। প্রকৃতির সাথে যার বাস। ছোটবেলা থেকেই সখ্য গাছ পালা আর পশু পাখি সাথে। ১৯৮৪ সাল। নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন ও চরাঞ্চলে গাছ পালায় ভরে দিতে মাত্র ৫/৬ টি গাছ নিয়ে শুরু। এখন যা ‘এরশাদ গার্টেন।’ এলাকার মানুষের বিনোদনের প্রধান মাধ্যম।
একশুক্রবার রৌমারী- জামালপুর সড়কের দেওয়ান গঞ্জ উপজেলার পাথরের চর ব্রিজ দেখতে গিয়ে শুনলাম এরশাদ গার্টেনের কথা। সঙ্গে সঙ্গে ছুটলাম এরশাদ গার্টেনে। পাথরের চর ব্রিজ থেকে ২/৩ কিলোমিটার। ছোট করে সাইন বোর্ডে লেখা ‘এরশাদ গার্ডেন।’
বাইরে থেকে মনে হলো কোন ফুলের নার্সারী। বাঁশের বেড়ার গেইট। কয়েকজন ছোট ছেলে মেয়ে গেইটে দাড়ানো। জানালো ভেতরে ঢুকতে টিকেট লাগবে। ৫ টাকা। টিকেট কে দেয় জানতে চাইলে দেখিয়ে দিল এরশাদ আলীকে। তিনি পাশের ফুলের বাগানে বেশ কয়েকজন স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থী পর্যটকদের সাথে কথা বলছেন। সাংবাদিক পরিচয় দেয়ায় মনে হয় রেগে গেলেন। ক্ষোভ ঝাড়লেন স্থানীয় সাংবাদিকদের প্রতি। শেরপুর থেকে এসেছি শুনে জানালেন স্থানীয় কিছু সাংবাদিক রিপোর্ট করার কথা বলে অনেক টাকা হাতিয়ে নিলেও কোনও রিপোর্ট করেনি।
কথা বলতে বলতে প্রবেশ করলাম বাগানে। আশ্চর্য। প্রবেশ গেইটেই রাখা হয়েছে ঘুঘু, খরগোস। রয়েছে কবুতর ও বন্য পাখি ও হাসের উন্মুক্ত বাসা। বিশাল দেহের সজারু সত্যিই নজরকারা। কিছুদূরেই নিজের হাতে তৈরী বাঁশ ও কাঠের তৈরী পর্যটন ‘ওয়াচ টাওয়ার।’ বিভিন্ন ফুল, ফল, বন্য গাছ পালা ও ক্যাকটাসে ভরা বাগানে যে কারোই মন ভালো হয়ে যাবে। বাগানে রয়েছে পঞ্চাশোর্ধ এরশাদ আলীর মমতা মাখানোর সাথে তার ২ ছেলের আধুনিকতার সমন্বয়। অতিক্ষুদ্র মাটির টবে বানানো সুন্দর স্ট্যান্ডের আইডিয়া সবারই মনে ধরবে। হাতে তৈরী ওয়াচ টাওয়ারে বাগানের সৌন্দর্য দেখার পাশাপাশি দেখা যায় পাশেই সীমান্তবর্তী পাহাড়ের দৃশ্য। যা সত্যিই অপরুপ।
এরশাদ আলী জানান, তার বাগানে ড্রাগন ফল সহ ১২‘শ প্রজাতির গাছ পালা রয়েছে। ২ ছেলে ও ৪ মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। শুরুর দিকে কৃষি অফিসের লোকজন আসলেও এখন আসেন না। প্রথমদিকে তিনি নার্সারীতে চারা উৎপাদন করতেন। চরাঞ্চলে তার নার্সারীর চারাই একমাত্র অবলম্বন ছিল। লাভও হয়েছে বেশ। কিন্তু এখন তেমন চারা উৎপাদন করেন না। তাই বাধ্য হয়ে প্রবেশ মূল নির্ধারন করেছেন। এটা দিয়েই তিনি গাছ পালার লালন পালন করেন। তিনি জানান, প্রতিদিনই তার বাগান পরিদর্শনে আসে পর্যটকেরা। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, ‘আমি জাতীয় পুরস্কারের যোগ্য। কিন্তু প্রচার না থাকায় যোগ্যতা থাকা সত্বেও তা আমি পায়নি। সরকারি সাহায্য সহযোগিতা পেলে একে দেশের উদাহরণ স্বরুপ তৈরী করতে পারবো”
চরাঞ্চলের অজোপাড়া গায়ে প্রকৃতিপ্রেমী এরশাল আলীর ‘এরশাদ গার্ডেন’ বাস্তবেই এলাকায় উদাহরণ তৈরী করেছে। ব্যস্ততার ফাঁকে ক্ষনিকের নির্মল আনন্দ, প্রানভরে নি:শ্বাস নিতে নির্দিধায় ঘুরে আসতে পারেন গ্রামের ‘বোটানিক্যাল গার্ডেন’ এরশাদ গার্ডেনে।

0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন