দলের

সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১২

সোমেশ্বরী নদীতে বাঁধ দিয়ে পানি ব্যবসা শেরপুরের ২ উপজেলার হাজার হাজার একর জমি অনাবাদি ৭ গ্রামে তীব্র খাবার পানির সংকট



শ্রীবরদী নিউজ টুয়েন্টি ফোরডটকম
ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি সোমেশ্বরী নদীতে বাধ দিয়ে পানি বিক্রি ব্যবসায় ভাটিতে হাজার হাজার একর জমি অনাবাদি পড়ে আছে। নদী শুকিয়ে ধুধু বালুচর ও পানির স্তর ভূগর্ভের অনেক নিচে নেমে যাওয়ায় তীব্র খাবার পানির সংকটে পড়েছে ৭ গ্রামের বাসিন্দারা।
জানা গেছে, শ্রীবরদীর সীমান্তবর্তী রানিশিমূল ইউনিয়নের সীমান্তে রাঙ্গাজান, খাড়ামোড় গ্রাম দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে খরস্রোতা নদী সোমেশ্বরী। বর্ষা সহ সরা বছর জুরেই এ নদীতে থাকে পানির স্রোত। নদীটি শ্রীবরদীর বালিজুরি হালুয়াহাটি হয়ে ঝিনাইগাতির মহারশী নদীতে মিলিত হয়েছে। ভৌগোলিক ভাবে শ্রীবরদী ও ঝিনাইগাতির সীমান্তবর্তী এ অঞ্চলের পানির স্তর দেড়শ ফুট নিচে এবং বড় বড় পাথর যুক্ত। স্বাভাবিক ভাবেই গভীর ও অগভীর নলকুপ বসানো এ অঞ্চলের দরিদ্র মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই চাষাবাদ থেকে শুরু করে এ নদীর পানির উপরই নির্ভর করতে হয় শ্রীবরদী ও ঝিনাইগাতি উপজেলার রাঙ্গাজান, খাড়ামোড়া, বালিজুরি, দুধনই, দুপুরিয়া, ধানশাইল মাদারপুর, বিলাসপুর, ধানশাইল, বাগিরভিটা, চক পাড়া সহ ২০ গ্রামের মানুষকে। কিন্তু এবার সোমেশ্বরীর উজানে পর পর ৩ টি বাঁধ দিয়ে কয়েক জন পানি দস্যু পানি বিক্রির ব্যবসা শুরু করায় নদীর ভাটি অঞ্চলের ৭ টি গ্রামে দেখা দিয়েছে তীব্র পানি সংকট। হাজার হাজারএকর জমি পড়ে আছে অনাবাদি। নদীতে পানি না থাকায় দূরের গ্রামে গিয়ে গোসল ও খাবারের পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে ৭ গ্রামবাসীকে। সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে সোশ্বেরী নদীতে শ্রীবরদীর হালুয়াহাটিতে দেয়া হয়েছে প্রথম বাঁধটি। ভাটিতে ঝিনাইগাতি উপজেলার কাঁড়াগাও ও আয়নাপুরে রয়েছে আরও ২ টি বাধ। আয়নাপুরের বাঁধের পর থেকে নদীতেএক ফোঁটা পানি নেই। খরস্রোতা সোশ্বেরীতে ধূধূ বালুচর। একরের পর একর জমি পড়ে আছে অনবাদি। দুপুরিয়া, মাদারপুর, বিলাসপুর, ধানশাইল, বাগিরভিটা, চকপাড়া সহ ৭ গ্রামের মানুষের পানির জন্য হাহাকার উঠেছে। বাঁধের পানিতে আবাদ করা কৃষকরা জানায়, প্রতি একর জমির জন্য বাঁধ কমিটিকে দিতে  হচ্ছে ২ হাজার টাকা। হালুয়াহাটির বাধের পানি দিয়ে আবাদ করা হয়েছে প্রায় ২ হাজার একর জমি। সে অনুযায়ী হালুয়াহাটি বাঁধ থেকেই হাতিয়ে নেয়া  হচ্ছে ৪০ লক্ষ টাকা। 
 
কৃষকরা আরো জানায়, টাকা না দিলে মাঝপথে পানি বন্ধ করে দেয়া হয়। মেশিন দিয়ে আবাদ করলেও আমাদের ২ হাজার টাকা করেই দিতে হয়। এভাবে কাঁড়াগাও ও আয়না পুর বাঁধের অধীনেও রয়েছে কয়েক হাজার একর জমি। কথা হয় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক ফারুক, শুকুর আলী, ইস্রাফিল, সুবাস চন্দ্র রায়, আবুল হোসেন, মকছেদ, দুলাল, সাবেক ইউপি সদস্য আঃ রশিদ  সহ অনেকে অভিযোগ করে শ্রীবরদী নিউজ টুয়েন্টিফোর কে জানায়, আমরা এ নদীর উপর সম্পুর্ণ নির্ভরশীল। এ নদীর পানি দিয়ে আমরা এ অঞ্চলে বোরো ও আমন চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকি। কিন্তু হাতির আক্রমণে আমন ধান অনেকেই ঘরে তুলতে পারে না। নির্ভর করতে হয় বোরো আবাদের উপর। এ অঞ্চলে স্যালো মেশিন স্থাপন করা না যাওয়ায় নদী থেকে স্যালো দিয়ে পানি তুলে নদীর দুকুলের হাজার হাজার একর জমি আবাদ করা হয়। কিন্তু বিগত কয়েক বছর থেকে উজানে বাধ নির্মান করায় আমাদের ফসল ফলাতে সমস্যা হচ্ছে। এবার পর পর তিনটি বাধ নির্মান করায় নদী শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। আমরা পানির জন্য তাদের কাছে গেলে উল্টো আমাদের মারধর ও বিভিন্নভাবে নাজেহাল করে। এ নিয়ে এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান সহ বিভিন্ন জনের কাছে ধরনা দিয়েও কোন লাভ হয়নি। চাষাবাদ তো দূরে থাক বর্তমানে খাবার পানির জন্যও আমাদের দুর গ্রামে যেতে হচ্ছে। আবাদ করতে না পারায় এবার আমাদের দিন চলাতে কষ্ট হবে। অনেককে ভীটেমাটি বেঁেচ অন্যত্র চলে যেতে হবে। হালুয়াহাটি বাঁধ কমিটির সভাপতি জানান এ বাঁধের অধিনে ২ হাজার একর জমি চাষ হয়। চাষীদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন এ টাকা বাঁধ নির্মানে ব্যয় করা হবে। কিন্তু বাকী টাকা কোথায় যাবে এর কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। আয়নাপুর বাঁধের আবু সাঈদ ও হাফিজুর জানায়, তাদের বাধের অধীনে ১ হাজার একর জমি রয়েছে। কিন্তু হালুয়াহাটি বাধের লোকজন তাদের ঠিকমতো পানি না দেয়ায় তাদের ১ হাজার একর জমির আবাদ হুমকির মুখে পড়েছে।
শ্রীবরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার গুলশান আরা জানান, এ বাঁধ কে কি ভাবে দিয়েছে আমি তা জানি না এবং এর জন্য কোন অনুমোদন দেয়া হয়নি।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন