দলের

রবিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১২

আপেল কুল ভাগ্য ফিরিয়েছে বিদেশ থেকে প্রতারিত শ্রীবরদীর কয়েক যুবকের



শ্রীবরদী নিউজ টুয়েন্টি ফোরডটকম
জমি জমা বিক্রি করে আরব আমিরাতে পাড়ি জমিয়েছিলেন শ্রীবরদী উপজেলার উত্তর শ্রীবরদী গ্রামের যুবক রিয়াজ উদ্দিন। উদ্দেশ্য সংসারের একটু সুখ। কিন্তু সুখ তার সাথে প্রতারণা করে। কাজের অনুমোদন না থাকায় মাত্র আড়াই মাস অবস্থান করে তাকে ফেরত আসতে হয় নিজ দেশে। সেই আড়াই মাসের করুন পরিণতির কথা মনে হলে এখনও গাঁ শিউরে ওঠে রিয়াজ উদ্দিনের। দেড় মাস পর শূন্য হাতে দেশে এসে হতাশায় দু‘চোখে অন্ধকার দেখতে থাকে। ২০০৭ সাল। স্থানীয় ওয়াজেদ আলী ও রিয়াজ উদ্দিন দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাগার চরে রিয়াজের বড় ভাইয়ের কুল বাগান দেখতে যায়। কুল বাগান দেখে অভিভূত হয়ে যায় ওয়াজেদ আলী। সে দিনই ওয়াজেদ আলী রিয়াজ উদ্দিনকে কুল বাগান করার জন্য পরামর্শ দেয়। কথামতো ওয়াজেদ আলী তার আড়াই একর জমি ছেড়ে দেয়। শুরু হয় রিয়াজ উদ্দিনের পথচলা। সঙ্গে নেয় একই গ্রামের বেকার যুবক হাসান, হাবিব ও দুলালকে। ৪ জনের সে দিনের স্বপ্ন আজ বাস্তব। অভাবকে দূরে ঠেলে রিয়াজ, হাসান ও দুলাল আজ স্বাবলম্বী। পাশাপাশি ওই বাগান কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে এলাকার অনেকের। ওয়াজেদ, রিয়াজ, হাসান, দুলাল এখন শ্রীবরদীতে আদর্শ কুল চাষী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত। প্রতিদিন ভীড় করছে কুল চাষে আগ্রহীরা। পরামর্শ দিতেই দিনের অধিকাংশ সময় ব্যয় করতে হয় রিয়াজদের।

সরজমিনে উপজেলার উত্তর শ্রীবরদী কুল বাগানে গিয়ে দেখা যায়, গাছে গাছে লাল লাল পাকা কুল। কুলের ভরে গাছ, নুয়ে পড়েছে। পাইকাররা কুল কেনার জন্য ভীড় করেছে বাগানে। শ্রমিকরা ব্যস্ত কুল সংগ্রহে। কথা হয় রিয়াজের সাথে। তিনি জানান, এ আপেল কুল বাগান করতে খরচ হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার টাকা। প্রথম দিকে আপেল কুলের সাথে পেয়ারার চারাও রোপন করা হয়। আপেল কুল উৎপাদনে আসার আগেই পেয়ারা থেকে বাগানের খরচ উঠে আসে।  ২০১০ সালে প্রথম এ কুল বাগানে ফল আসে। সে বছর বিক্রি হয় ৬০ হাজার টাকা। ২০১১ সালে ১ লক্ষ টাকা। এবার এ পর্যন্ত দেড় লক্ষ টাকার মতো বিক্রি হয়েছে। আরও লক্ষাধিক টাকা বিক্রির আশা করছি। ক্রেতা কালু মিয়া জানায়, এ অঞ্চলের অন্যান্য বাগানের তুলনায় এ বাগানের আপেল কুলের স্বাদ বেশি। সে কারণে বাজারে এর যথেষ্ঠ চাহিদা রয়েছে। বাগান দেখতে আসা আবুল, ফরহাদ, বাবুসহ অনেকে জানান, তারা আপেল কুল চাষের মাধ্যমে বেকারত্ব ঘুচাতে পরামর্শ ও বাস্তব অভিজ্ঞতার জন্য এসেছেন। বাগানে সার্বক্ষণিক শ্রমিক মতিন, আতিকুর জানায়, এ বাগানে তাদের মতো আরও ৫ জন শ্রমিক রয়েছে। এছাড়া সৃৃজনওয়ারী অনেক শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। জমিদাতা ও মূল পরিকল্পনাকারী মোঃ ওয়াজেদ আলী জানান, প্রথম দিকে আমাদের দেখে সবাই হাসতো। স্থানীয় কৃষি অফিসে গেলেও তারা আমাদের কোন সাহায্য করেনি। বর্তমানে আমাদের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। এখন কৃষি অফিসারসহ অনেকেই সাফল্যের অংশীদার দাবি করছে। তিনি আরো বলেন, বাগানে গাড়ী নিয়ে যাওয়ার কোন রাস্তা নেই। রাস্তা না থাকায় উৎপাদিত ফল কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
শ্রীবরদী উপজেলা কৃষি অফিসার এফএম মোবারক আলী বলেন, এ কুল বাগানটি উপজেলার মডেল। অনেকেই এ বাগান দেখে কুল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে এবং পরামর্শের জন্য নিয়মিতই অফিসে আসছে।
শ্রীবরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার গুলশান আরা জানান, সম্প্রতি আমি বাগানটি ঘুরে এসেছি। উপজেলায় এ রকম একটি বাগান আমাকে অভিভূত করেছে। বাগান চাষীদের কুল বাগান করে দারিদ্র জয় সত্যিই অনুকরণীয়।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন