মোঃ রেজাউল করিম বকুল
টিনের একচালা ছাপড়া। ক’বছর ধরে ছাপড়াটি ব্যবহৃত হচ্ছে গ্রাম্য বখাটের আড্ডাস্থল হিসেবে। রাতে কখনো চলে জুয়া। আবার কখনো চলে নানা ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা যায় এরই নাম শ্রীবরদী উপজেলার বন্ধধাতুয়া রেজিঃ প্রাথমিক বিদ্যালয়। একে সম্বল করে নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন শিক্ষকরা। কবে এখানে ছাত্রছাত্রী পড়তে আসে স্থানীয় কেউ জানেনা। তবে ছাত্রছাত্রীদের নামে রয়েছে উপবৃত্তি। এর জন্যে বছরে বরাদ্দ হচ্ছে সরকারের স্লীপের টাকা। অনুদানের টাকাও বাদ পড়েনি। এভাবে চলছে প্রায় দেড় যুগ ধরে। কিন্তু কেউ কখনো জানতে চায়নি কেন এমন হচ্ছে? সম্প্রতি বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে গেলে এলাকার লোকজন তুলে ধরেন এ চিত্র। প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমের খোঁজ নিতে গেলে এরকমই ওঠে আসে আরো কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম। শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার সরকারি, বেসরকারি রেজিঃ ও কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১শ ৫৪টি বিদ্যালয়। নিয়মানুযায়ী সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসাররা নিয়মিত বিদ্যালয় পরিদর্শন করবেন। থাকবেন নিজ কর্মস্থলে। কিন্তু এখানে ঘটছে এর ব্যতিক্রম। জেলা শহরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে দায়সাড়াভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। পরিদর্শনে না গিয়ে অফিসে বসেই করছেন পরিদর্শনের স্বাক্ষর। সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসাররা মাঝে মধ্যে শিক্ষকদের মোটরসাইকেলের পেছনে চড়ে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। এছাড়াও কতিপয় শিক্ষক, সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও শিক্ষা কর্মকর্তার নানা অনিয়ম দুর্নীতির কারণে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, শ্রীবরদী উপজেলার বনপাড়া রেজি:বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। এখানে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ। অন্য শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে অনিয়মিত। শিক্ষার্থীও কাগজে কলমে। এ জন্য ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা একাধিকবার উপজেলা শিক্ষা অফিসারসহ সংশি¬ষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। গত ১১ সেপ্টেম্বর ম্যানেজিং কমিটির আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা সহকারি শিক্ষা অফিসার রোজিনা খাতুন বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে যান। তিনি অভিযোগের সত্যতা পেয়ে শিক্ষকদের বেতন ভাতা বন্ধ করে দেন। কিন্তু কিছুদিন না যেতেই অদৃশ্য কারণে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন ভাতা আবার ছাড় করেন। তবে শিক্ষকরা থেকে যান আগের মতোই। এ নিয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি, অভিভাবক ও এলাকাবাসী আবারো উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সংশি¬ষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। তবে অদ্যবদি এর বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে জানা যায়নি।
উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বন্ধ ধাতুয়া রেজিঃ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দায়িত্বে রয়েছেন সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার রোজিনা খাতুন। তিনি সরকারি নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করে ওই বিদ্যালয়ের ঘর, আসবাবপত্র ও ছাত্রছাত্রী না থাকলেও উপবৃত্তি ও শিক্ষকদের বেতন ভাতা দিচ্ছেন। যেখানে বিদ্যালয় ঘর নেই সেখানে ¯ি¬পের টাকা বরাদ্দ দিয়েও তিনি উপজেলায় আলোচনার ঝড় তুলেছেন। এছাড়া ওই শিক্ষা অফিসার গড়পাড়া রেজিঃ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঢনঢনিয়া রেজি: বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আরো কয়েকটি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে এভাবেই আতাত করে দূর্নীতি করে আসছে। ঢনঢনিয়া রেজি: প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবিশ্বাস্যভাবে দুই প্রধান শিক্ষক বেতন ভাতা উত্তোলন করছেন। উলে¬খ্য যে, অপর সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার মঞ্জুরুল ইসলাম জুয়েল দায়িত্বে থাকা কালীন গড়পাড়া রেজিঃ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বেশ কয়েকবার পরিদর্শনে যান। তিনি কোন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী না পেয়ে শিক্ষকদের বেতন ভাতা বন্ধ করেন। রহস্য জনক কারণে রোজিনা খাতুন দায়িত্বে এসেই বেতনভাতা ছাড় করেন।
অপরদিকে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মাহবুব জামান ও অফিস সহকারি মোশারফ হোসেনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট আর্থিক দূর্নীতি, বিভিন্ন অনিয়ম ও অসাদাচরণের একাধিক অভিযোগ তুলেন শিক্ষকরা। এ নিয়ে একাধিকবার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করেন তারা। এ ব্যাপারে একাধিক জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়। তার পরেও কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে বেপরোয়া হয়ে ওঠে শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা।
জেলায় শিক্ষার হারের দিক থেকে এ উপজেলা সর্বনিম্ন। তার মধ্যে সীমান্তবর্তী আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় শিক্ষার হার আরো নিচে। প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় দূর্নীতির প্রতিকার না পাওয়ায় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উপজেলাবাসী। উপজেলা নির্বাহী অফিসার গুলশান আরা জানান, এমনি অভিযোগে একটি বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। সেখানে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্র্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করেছেন। উপজেলার শিক্ষা ব্যবস্থার বেহাল পরিস্থিতির সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, আমি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারি।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন