দলের

মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১১

শীতের তীব্রতায় সীমান্তবাসীর দুর্ভোগ


তানজিল রিমন
রাত নয়টা বাজতে দেরি নেই। কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে চারপাশ। সন্ধ্যা থেকেই কুয়াশা পড়ছে। পড়ছে তো পড়ছেই। যেন ঝিরঝিরি বৃষ্টি পড়ছে। কুয়াশার কারনে দুই হাত দূরেও কী আছে বোঝার উপায় নেই। এই অবস্থায় এগিয়ে চলছে একটি সিএনজি চালিত অটো। সামনের বাতিতেও কাজ হচ্ছে না। কোনো রকমে ধীরে ধীরে চলছে তা। হঠাৎ একটি গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে বসে সিএনজিচালিত অটো। গতি কম থাকায় রক্ষা। এই ঘটনাটি ঘটে শ্রীবরদী থেকে শেরপুর জেলা সদরে যাওয়ার পথে। শীতের রাতে গাড়ি চালাতে গিয়ে প্রায়ই এই ধরণের ঘটনা ঘটছে। একদিকে প্রচন্ড শীত আর ঘন কুয়াশা, তার সাথে যোগ হয়েছে উত্তরের হিমেল হাওয়া। এতে জেলার সীমান্তবাসীর জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। নিম্ন আয়ের লোকজনের কষ্টের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আগুন জ্বালিয়ে, পুরোনো কাপড় পড়ে কোনো রকমে শীত নিবারণ করছেন তারা।
পৌষের প্রথম সপ্তাহেই সীমান্ত এলাকায় শীতের তীব্রতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। হিমালয়ের কাছে হওয়ায় দিন রাত পালা করে যেন শীত প্রতিযোগিতায় নেমেছে। আজ কয়েক দিন সূর্যের দেখা নেই। সন্ধ্যা হতে না হতেই ঘন কুয়াশা পড়তে শুরু করে। সকাল নয়টা-দশটা নাগাদ কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকে পুরো এলাকা। সারা দিন বইছে হিম হিম হাওয়া। উত্তরের গারো পাহাড় থেকে বয়ে আসা এই হিমেল হাওয়া শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি করছে প্রতিনিয়ত। এতে সীমান্ত এলাকার নিম্নআয়ের মানুষের কষ্ট বেড়ে চলছে। শীতের কাপড় না থাকায় আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন তারা। অন্য দিকে যাদের সামর্থ্য আছে, তারা ভিড় করছেন গরম কাপড় বিক্রির দোকানগুলোয়। এরই মধ্যে জমে উঠেছে বিভিন্ন শীতের কাপড়ের বেচাবিক্রি।
প্রচুর কুয়াশা পড়ার কারণে গাড়িচালকদের রাতের বেলায় গাড়ি চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সকালবেলায়ও হেডলাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে তারা। ‘রাইতের বেলায় তো গাড়ি চালানই যায় না। এতো কুয়াশায় তো কিছু দেখনই যায় না। সকালেও কুয়াশার মধ্যে হেডলাইট জ্বালাইয়া গাড়ি চলাইতে হয়।’
অন্যদিকে পাহাড়ি এলাকায় বসবাসরত গারো, কোচ, মারমা, হাজংসহ আদিবাসীদের কষ্ট আরও বেশি। পাহাড়ি এলাকায় ঘন কুয়াশায় দিনের বেলায় চলাচল করা দায়। আদিবাসীরা বেশিরভাগই দরিদ্র হওয়ায় শীত নিবারণ করতে পারছে না। বাড়ির বাইরে গিয়ে তাদের বিভিন্ন কাজ করতে পারছে না। আদিবাসীদের মতো জেলার খেটে খাওয়া মানুষদের স্বাভাবিক কাজে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে শীত।
শীত বাড়ার সাথে সাথে জেলায় সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে অনেকে। এদের মধ্যে বৃদ্ধ ও শিশুদের সংখ্যাই বেশি। জেলা সদরসহ পাঁচটি উপজেলার প্রধান প্রধান বাজারগুলো এখন নয়টা না বাজতেই ফাঁকা হয়ে যায়। দোকানপাট বন্ধ থাকায় লোকজনের আনাগোনাও কমে যায়। শ্রীবরদী বাজারের একজন ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘রাত করে লাভ কী? লোকজন নাই, বেচাকেনা নাই। যেই শীত পড়ছে, বাড়ি যাইয়া ঘুমানোই ভালো।’ গ্রামের দোকানপাট সন্ধ্যার পরপরই বন্ধ থাকতে দেখা গেছে।


0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন