তাইয়্যেবুর রহমান রিয়াদ
বড় বড় গাছে ঘেরা বেশ উঁচু একটি জায়গা। ভেতরে সবুজ ঘাসের বিচালিতে বসতে ইচ্ছে করে। চারদিকে সবুজের রাজত্ব। গাছে গাছে নানান ধরণের পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে। ভেতরে সারি সারি গাছের চারা। এখানেই একপাশে কয়েকজন গোল হয়ে বসে আছে। কাছে গিয়ে দেখা গেল, ওদের একজন দাঁড়িয়ে গল্প পড়ছে। তার নিজের লেখা গল্প। বয়স আর কত হবে? খুব বেশি হলে ১২ বছর। উৎসাহের মাত্রাটা বেড়ে গেল কয়েকধাপ। ছেলেটির গল্প পড়া শেষে বসে পড়ল। নাম ঘোষণা হল আরেকজনের। সে দাঁড়িয়ে একটি ছড়া পড়ল। এরপর একে একে প্রায় সবাই পড়ল। কেউ গল্প, কেউ বা ছড়া আর কেউ কবিতা। তাও আবার স্বরচিত। শেষে একজন ওদের সবার লেখা নিয়ে আলোচনা করতে থাকে। কীভাবে লিখলে আরও ভালো হবে, বেশি বেশি করে পড়তে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। ১৭ জনের দলের দুইজন ছাড়া কারো বয়স ১৬ পেরোবে না। এরা সবাই স্থানীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। প্রাথমিক বিদ্যালয়েরও একজন রয়েছে। সবার কথা শুনে বুঝা গেল, এটা একটি সাহিত্য আসর। স্থানীয় শিশু-কিশোর সংগঠন ফুটতে দাও ফুল এর আয়োজনে ৬৩ তম সাহিত্য আসর এটি। অবাক না হয়ে পারা যায় না। মফস্বল এলাকায় সাহিত্য চর্চা করছে একদল শিশু-কিশোর!
শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার সরকারি নার্সারিতে বসেছিল এই আসর। মফস্বল এলাকায় সাহিত্য চর্চা করা এত সহজ বিষয় নয়। বড় বড় শহরগুলোতেই সাহিত্যচর্চা করা বড়দের জন্যই কঠিন। আর দেশের সীমান্তবর্তী একটি এলাকায় কয়েকজন শিশু-কিশোর সাহিত্যচর্চা করছে। এখন পর্যন্ত ৬৩টি সাহিত্য আসরের আয়োজন করেছে। কথা বলে জানা গেল, শুধু সাহিত্য আসরই নয়। ছোটদের জন্য তারা একটি পত্রিকাও বের করেছে। ফুলকলি নামের পত্রিকাটির ৯টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। শুধু ফুটতে দাও ফুলের সদস্য কিংবা শেরপুরের লেখকরাই নয়, সারা দেশের বিভিন্ন জায়গার অনেক লেখকের লেখাও এতে ছাপা হয়েছে। ফুলকলির ৯ম সংখ্যা দেখে ভালোই লাগল। আকারে ছোট হলেও বেশ পরিপাটি। হলুদ রঙের প্রচ্ছদ সহজেই আকর্ষণ করে। ছোটদের লেখার পাশাপাশি দেশের খ্যাতনামা লেখকদের লেখাও রয়েছে এতে। না বললে বিশ্বাসই হবে না, এটি ফটোকপি করে ছাপানো। সংগঠনটির সহ-পরিচালক রেজাউল করিম লিটন জানান, ২০০৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর ‘সুপ্ত প্রতিভা বিকাশ করি/সুন্দর ভবিষ্যত এসো গড়ি’ স্লোগানকে প্রতিপাদ্য করে ফুটতে দাও ফুল এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় একটি পাঠাগার স্থাপনের মাধ্যমে। পাঠাগারে নিয়মিত তিনটি জাতীয় দৈনিক রাখা হত এবং বই ছিল শতাধিক। বড়রাও এসে পাঠাগারে পত্রিকা পড়ত। পাঠাগারটিই সংগঠনের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হত। এর আগে খেলাধুলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল সংগঠনের কার্যক্রম। ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে ফুলকলির প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়। ২০০৫ সালে শুরু হয় সাহিত্য আসর। প্রায় প্রতি সপ্তাহেই বসত সাহিত্য আসর। ২০০৮ সালের শুরুর দিকে বিভিন্ন সমস্যার কারনে পাঠাগারটি বন্ধ হয়ে যায়। এরমধ্যে চারটি লেখালেখির কর্মশালা, একটি ক্যারিয়ার কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে গল্প নিয়ে তিনটি পাঠচক্র হয়েছে। পরিবেশ রক্ষায় গাছের ভূমিকা অনেক। সংগঠনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রায় ১৫০০ গাছের চারা বিতরণ করেছে। বিভিন্ন দিবসে ছোটদের জন্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। ধুমপান না করতে শপথ গ্রহণ করেছে জড়িত সবাই। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম করেছে। সবচেয়ে বড় কাজ যেটি করেছে, তা হল শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রায়ই বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন। এতে ছোটদের ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিল। প্রেসক্লাব-শ্রীবরদীর সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান আবু বলেন, ‘ছোটদের মেধা বিকাশে সাহিত্য চর্চা, বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন অনেক জরুরি। আর এসব আয়োজন করার কথা বড়দের। কিন্তু পুরো জেলায় ছোটদের নিয়ে কোনো কাজ হচ্ছে না। আমাদের এখানে ছোটদের জন্য ছোটরাই আয়োজন করছে। ওরা আমাদের গর্ব।’ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানজিল রিমন বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের সবাই ছোট হওয়ায় পাঠাগারটি বন্ধ হয়ে গেছে। কেননা কোনো ঘর ভাড়া নেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। এখন কোনো কার্যালয় নেই। কিন্তু আমাদের কার্যক্রম থেমে নেই। ভবিষ্যতে আমরা পাঠাগারটি আবারও চালু করব। প্রতি বছর দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়ার চিন্তা আছে। স্থানীয়ভাবে বইমেলা ও ছোটদের জন্য পত্রিকা প্রকাশ করার পরিকল্পনা রয়েছে।’
আজ শিশু-কিশোর সংগঠন ফুটতে দাও ফুল এর ৮ বছর পূর্তি হচ্ছে। এ উপলক্ষে আজ এক সাধারণ সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে আলোচ্য বিষয়Ñ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত আগামী ১৮ ও ২০ জানুয়ারি শিশু উৎসব। দুই দিনব্যাপী এই আয়োজনে থাকছে শিক্ষার্থীদৈর জন্য পুরস্কার প্রতিযোগিতা, শিশুতোষ চলচ্চিত্র প্রদর্শন, আলোচনা, পুরস্কার বিতরণ ও ফুটতে দাও ফুল সম্মাননা প্রদান এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বৃহত্তর ময়মনসিংহের ছয় জেলার সাত ব্যক্তিকে ফুটতে দাও ফুল সম্মাননা পদক ২০১১ প্রদান করা হবে। আজকের সাধারণ সভায় ঘোষণা হবে কারা পাচ্ছেন এই সম্মাননা।
বড় বড় গাছে ঘেরা বেশ উঁচু একটি জায়গা। ভেতরে সবুজ ঘাসের বিচালিতে বসতে ইচ্ছে করে। চারদিকে সবুজের রাজত্ব। গাছে গাছে নানান ধরণের পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে। ভেতরে সারি সারি গাছের চারা। এখানেই একপাশে কয়েকজন গোল হয়ে বসে আছে। কাছে গিয়ে দেখা গেল, ওদের একজন দাঁড়িয়ে গল্প পড়ছে। তার নিজের লেখা গল্প। বয়স আর কত হবে? খুব বেশি হলে ১২ বছর। উৎসাহের মাত্রাটা বেড়ে গেল কয়েকধাপ। ছেলেটির গল্প পড়া শেষে বসে পড়ল। নাম ঘোষণা হল আরেকজনের। সে দাঁড়িয়ে একটি ছড়া পড়ল। এরপর একে একে প্রায় সবাই পড়ল। কেউ গল্প, কেউ বা ছড়া আর কেউ কবিতা। তাও আবার স্বরচিত। শেষে একজন ওদের সবার লেখা নিয়ে আলোচনা করতে থাকে। কীভাবে লিখলে আরও ভালো হবে, বেশি বেশি করে পড়তে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। ১৭ জনের দলের দুইজন ছাড়া কারো বয়স ১৬ পেরোবে না। এরা সবাই স্থানীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। প্রাথমিক বিদ্যালয়েরও একজন রয়েছে। সবার কথা শুনে বুঝা গেল, এটা একটি সাহিত্য আসর। স্থানীয় শিশু-কিশোর সংগঠন ফুটতে দাও ফুল এর আয়োজনে ৬৩ তম সাহিত্য আসর এটি। অবাক না হয়ে পারা যায় না। মফস্বল এলাকায় সাহিত্য চর্চা করছে একদল শিশু-কিশোর!
![]() |
| পুরস্কার প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ |
শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার সরকারি নার্সারিতে বসেছিল এই আসর। মফস্বল এলাকায় সাহিত্য চর্চা করা এত সহজ বিষয় নয়। বড় বড় শহরগুলোতেই সাহিত্যচর্চা করা বড়দের জন্যই কঠিন। আর দেশের সীমান্তবর্তী একটি এলাকায় কয়েকজন শিশু-কিশোর সাহিত্যচর্চা করছে। এখন পর্যন্ত ৬৩টি সাহিত্য আসরের আয়োজন করেছে। কথা বলে জানা গেল, শুধু সাহিত্য আসরই নয়। ছোটদের জন্য তারা একটি পত্রিকাও বের করেছে। ফুলকলি নামের পত্রিকাটির ৯টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। শুধু ফুটতে দাও ফুলের সদস্য কিংবা শেরপুরের লেখকরাই নয়, সারা দেশের বিভিন্ন জায়গার অনেক লেখকের লেখাও এতে ছাপা হয়েছে। ফুলকলির ৯ম সংখ্যা দেখে ভালোই লাগল। আকারে ছোট হলেও বেশ পরিপাটি। হলুদ রঙের প্রচ্ছদ সহজেই আকর্ষণ করে। ছোটদের লেখার পাশাপাশি দেশের খ্যাতনামা লেখকদের লেখাও রয়েছে এতে। না বললে বিশ্বাসই হবে না, এটি ফটোকপি করে ছাপানো। সংগঠনটির সহ-পরিচালক রেজাউল করিম লিটন জানান, ২০০৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর ‘সুপ্ত প্রতিভা বিকাশ করি/সুন্দর ভবিষ্যত এসো গড়ি’ স্লোগানকে প্রতিপাদ্য করে ফুটতে দাও ফুল এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় একটি পাঠাগার স্থাপনের মাধ্যমে। পাঠাগারে নিয়মিত তিনটি জাতীয় দৈনিক রাখা হত এবং বই ছিল শতাধিক। বড়রাও এসে পাঠাগারে পত্রিকা পড়ত। পাঠাগারটিই সংগঠনের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হত। এর আগে খেলাধুলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল সংগঠনের কার্যক্রম। ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে ফুলকলির প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়। ২০০৫ সালে শুরু হয় সাহিত্য আসর। প্রায় প্রতি সপ্তাহেই বসত সাহিত্য আসর। ২০০৮ সালের শুরুর দিকে বিভিন্ন সমস্যার কারনে পাঠাগারটি বন্ধ হয়ে যায়। এরমধ্যে চারটি লেখালেখির কর্মশালা, একটি ক্যারিয়ার কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে গল্প নিয়ে তিনটি পাঠচক্র হয়েছে। পরিবেশ রক্ষায় গাছের ভূমিকা অনেক। সংগঠনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রায় ১৫০০ গাছের চারা বিতরণ করেছে। বিভিন্ন দিবসে ছোটদের জন্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। ধুমপান না করতে শপথ গ্রহণ করেছে জড়িত সবাই। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম করেছে। সবচেয়ে বড় কাজ যেটি করেছে, তা হল শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রায়ই বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন। এতে ছোটদের ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিল। প্রেসক্লাব-শ্রীবরদীর সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান আবু বলেন, ‘ছোটদের মেধা বিকাশে সাহিত্য চর্চা, বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন অনেক জরুরি। আর এসব আয়োজন করার কথা বড়দের। কিন্তু পুরো জেলায় ছোটদের নিয়ে কোনো কাজ হচ্ছে না। আমাদের এখানে ছোটদের জন্য ছোটরাই আয়োজন করছে। ওরা আমাদের গর্ব।’ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানজিল রিমন বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের সবাই ছোট হওয়ায় পাঠাগারটি বন্ধ হয়ে গেছে। কেননা কোনো ঘর ভাড়া নেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। এখন কোনো কার্যালয় নেই। কিন্তু আমাদের কার্যক্রম থেমে নেই। ভবিষ্যতে আমরা পাঠাগারটি আবারও চালু করব। প্রতি বছর দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়ার চিন্তা আছে। স্থানীয়ভাবে বইমেলা ও ছোটদের জন্য পত্রিকা প্রকাশ করার পরিকল্পনা রয়েছে।’
আজ শিশু-কিশোর সংগঠন ফুটতে দাও ফুল এর ৮ বছর পূর্তি হচ্ছে। এ উপলক্ষে আজ এক সাধারণ সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে আলোচ্য বিষয়Ñ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত আগামী ১৮ ও ২০ জানুয়ারি শিশু উৎসব। দুই দিনব্যাপী এই আয়োজনে থাকছে শিক্ষার্থীদৈর জন্য পুরস্কার প্রতিযোগিতা, শিশুতোষ চলচ্চিত্র প্রদর্শন, আলোচনা, পুরস্কার বিতরণ ও ফুটতে দাও ফুল সম্মাননা প্রদান এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বৃহত্তর ময়মনসিংহের ছয় জেলার সাত ব্যক্তিকে ফুটতে দাও ফুল সম্মাননা পদক ২০১১ প্রদান করা হবে। আজকের সাধারণ সভায় ঘোষণা হবে কারা পাচ্ছেন এই সম্মাননা।

ভাল । এগিয়ে যাও আরো সামনের দিকে এই প্রত্যাশা সবসময় । একটা উপদেশ , আগলে ধরে থাকার প্রত্যয় ব্যাক্ত কর । সাফল্য আসবেই । কেননা সীমাহীন ধৈর্য্য না থাকলে এখানে টিকে থাকা কঠিন । আশা করি তোমাদের পাশে থাকতে পারব সবসময় । আমার ব্লগসাইট www.prottoyblog.wordpress.com
আরো এগিয়ে যাক ফুটতে দাও ফুল... এই প্রত্যাশা চিরকালীন...