আদিবাসী কোচ সম্প্রদায়
উপজেলার সীমাস্তবর্তী ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমানা ঘেঁেষ গারো পাহাড়ের উপত্যকায় বসবাসরত আদিবাসী কোচদের বড়ই দূর্দিন। বহিরাগত আগ্রাসী চক্রের থাবায় জমিজমা হারিয়ে আজ তারা নিঃস্ব। সম্পদ হারানোর যন্ত্রনা বুকে নিয়ে আজও তারা লড়াই করে যাচ্ছে ক্ষুধা-দারিদ্রতা সঙ্গে। সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে নিজস্ব ভাষা সংস্কৃতি ও জীবনাচার রক্ষায়। যাদের এক সময়ে ভূমি ছিল অঢেল সম্পদ এখন তারা নিঃস্ব। বন বিভাগের জায়গায় আশ্রায় নিয়েছে আদিবাসী কোচ পরিবারগুলো। তাদের নেই কোন কর্মসংস্থান, নেই যথাযথ শিক্ষা গ্রহনের সুযোগ। বকশীগঞ্জ ও শ্রীবরদী উপজেলার চান্দাপাড়া , দিগলকোনা, কর্ণজোড়া, বাবেলাকোনা, বালুজুড়ি, নকশী, ডালুয়া, খাড়ামুড়া, রাঙ্গাজানসহ পাহাড়িয়া বনাঞ্চলের গ্রামে কয়েক শত পরিবার বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সাথে বসবাস করে আসছে। এদের মধ্যে কোচ সম্প্রাদায় কৃষ্টির দিক থেকে আদিবাসী গারোদের মত মাতৃতান্ত্রিক হলোও ধর্মীয় সহ বেশ কিছু বিষয়ে অন্যদের তুলনায় স্বতন্ত্র। কোচদের ভাষা, দৈহিক গঠন, কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও জীবিকা পদ্ধতি আদিবাসীদেরই ইঙ্গিত বহন করে। পূর্বপুরুষদের ন্যায় পাহাড়ি উপত্যকায় জুম চাষ করে তারা জীবিকা নির্বাহ করে। এ গারো পাহাড়ের উপজাতি অভাব ও দারিদ্র্যের মধ্যে তাদের প্রাচীন সংস্কৃতি ও জীবনবোধ প্রাণপণে ধরে রাখার চেষ্টা করছে।
নিজেদের সামাজিক জীবনের বাইরে এসে তারা আজও দেশের মূল জীবনধারা ও স্রোতের সঙ্গে তেমনভাবে তাল মেলাতে পারছেনা। আদিকাল থেকে উপজাতি কোচরা যে জমির ওপর বসবাস করছে, যে পাহাড়-জঙ্গল কেটে আবাদযোগ্য করছে সেই জমি এখন তাদের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। কাজের অভাবে কোচদের চরম সংকটে সৃষ্টি করেছে। খাড়ামোড়া গ্রামের প্রবীণ নরেছ চন্দ্র কোচ বলেন, ১৯৯০ সালে বন বিভাগ জুম চাষ নিষিদ্ধ করলে বেশীর ভাগ আদিবাসী বেকার হয়ে পড়ে। পাহাড়ের গায়ে তারা ধান মরিচ সিম আদা হলুদ শাকসবজি চাষ করতো। এসবও এখন বন্ধ। এছাড়া এক সময় দক্ষতার সঙ্গে তারা নিজেদের কাপড় নিজেরাই বুনন করত। তাদের বাশঁ শিল্প কাজও ছিল আকর্ষণীয়। পুঁজি সংকট কাচাঁমালের অভাব এবং উৎপাদিত পণ্যের বাজারজাত সমস্যার কারনে সে পেশা ছেড়ে দিয়েছে। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের আগ পর্যন্ত আদিবাসীদের জীবনযাপন ছিল নিরূপদ্রব। তাদের ধারণা ছিল পাহাড়ের জমিজমা গাছগাছালি সবই প্রকৃতির দান এবং এসবের ওপর একমাত্র অধিকার তাদেরই। তাদের এ ধারানা ক্রমাগত আঘাত আসতে শুরু করে ৪৭ সালের পর থেকে ভারত থেকে দলে দলে উদ্বাস্তুরা এসে বলপূর্বক উপজাতিদের জমিজমা জবর দখল করতে শুরু করে। সে সময় নীরব সম্মতিতে তারা উপজাতিদের জমিতে অনুপ্রবেশ করে। ফলে বহিরাগতদের অত্যাচারে আদিবাসীরা দেশ ত্যাগ করে ভারতের আসাম রাজ্য চলে যেতে বাধ্য হয়্। তাদের মধ্যে অনেকেই পরবর্তী সময়ে দেশে ফিরে এসে হারানো ঘরদোর জমিজমা আর পুনরুদ্ধার করতে পারেনি। জমির আইন সম্পদ মালিক ও উত্তরাধিকারীদের অবজ্ঞা করে তাদের জমি অন্যেদের কাছে লিজ দেয়া হয়েছে খাস জমি দেখিয়ে। এদিকে সম্পদ হারানোর যন্ত্রনা বুকে নিয়ে আজও তারা লড়াই করে যাচ্ছে ক্ষুধা দারিদ্রতা সঙ্গে। তারা এখন শ্রম বিক্রিসহ বাংলাদেশ ও ভারতের পাহােিড়র লাকড়ি বিক্রি করে কোন রকমে দিনানিপাত করছে। খাড়ামুড়া গ্রামের শিক্ষক বিরুতী রানী কোচ জানান এই এলাকার আদিবাসীদের শিক্ষার হার খুবই নাজুক। ইচ্ছা থাকলেও অর্থের অভাব যোগাযোগ ব্যবস্থা ও তাদের এলাকায় কোন শিক্ষা প্রতিষ্টান না থাকায় আদিবাসী কোচরা শিক্ষা লাভ করতে পারছেনা।
খাড়ামুড়া গ্রামের অর্থের অভাবে তাদের যুবতী মেয়েদের পাত্রস্থ করতে পারছেনা অনেকে। অনেক কোচ পিতা তাদের ঘরে যুবা মেয়েদের নিয়ে দুঃচিন্তাাগ্রস্ত। পুর্বপুরুষ থেকে এরা সংস্কৃতিমনা। অবসর সময়ে নাচ গানের আয়োজন করে আমেদ ফূর্তি করত। অর্থের অভাবে আগের মত সচারাচর আমোদ ফূর্তি করতে পারছে না। বর্তমান কোচদের প্রায় ঘরে ঘরে অভাব অনটন লেগে আছে।
এসব পপাহাড়িয়া এলাকায় চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। এতে এরা একদিকে অর্থ সংকটে ভুগছে অন্যদিকে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। চিকিৎসা বলতে গাছের লতা-পাতা ,ঝাড়-ফুকই সম্বল।
উপজেলার গারো পাহাড়ের বালিজুরি কোচপাড়া গ্রামের শ্রী প্রমিতা কোচ, দলগুমি কোচ, সূধারানী,কলাবতী,জীরমনি, সহ বোচ নারীরা তাদের নিজস্ব ভাষায় বলেন,লেইক্যা কী অইব? “ নিন্দ্রানি হালসালা হাংগারদা কতগুলো হাল বেদখল দেখে লাঙ্গাতে নে। নিদ্রা কষ্টছি টংট। নিন্দ্রানে কাইয়ুআন চাইচা” অর্থাৎ আমাদেরে অনেক জমি বেহাত হয়েছে। আমরা খুব কষ্টে আছি,আমাদের কেউ দেখে না।
মোঃ কামরুজ্জামান আবু
ক্ষুধা,কাজ নেই,নেই নিজস্ব ভূমি। পরনে এক টুকরো ময়লা কাপড়, হাটু থেকে বুক পর্যন্ত কোন রকমে ঢাকা। এর মধ্যে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে বন্যহাতির দল। সব মিলিয়ে ভাল নেই গারো পাহাড়ের আদিবাসী কোচ সম্প্রদায়।উপজেলার সীমাস্তবর্তী ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমানা ঘেঁেষ গারো পাহাড়ের উপত্যকায় বসবাসরত আদিবাসী কোচদের বড়ই দূর্দিন। বহিরাগত আগ্রাসী চক্রের থাবায় জমিজমা হারিয়ে আজ তারা নিঃস্ব। সম্পদ হারানোর যন্ত্রনা বুকে নিয়ে আজও তারা লড়াই করে যাচ্ছে ক্ষুধা-দারিদ্রতা সঙ্গে। সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে নিজস্ব ভাষা সংস্কৃতি ও জীবনাচার রক্ষায়। যাদের এক সময়ে ভূমি ছিল অঢেল সম্পদ এখন তারা নিঃস্ব। বন বিভাগের জায়গায় আশ্রায় নিয়েছে আদিবাসী কোচ পরিবারগুলো। তাদের নেই কোন কর্মসংস্থান, নেই যথাযথ শিক্ষা গ্রহনের সুযোগ। বকশীগঞ্জ ও শ্রীবরদী উপজেলার চান্দাপাড়া , দিগলকোনা, কর্ণজোড়া, বাবেলাকোনা, বালুজুড়ি, নকশী, ডালুয়া, খাড়ামুড়া, রাঙ্গাজানসহ পাহাড়িয়া বনাঞ্চলের গ্রামে কয়েক শত পরিবার বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সাথে বসবাস করে আসছে। এদের মধ্যে কোচ সম্প্রাদায় কৃষ্টির দিক থেকে আদিবাসী গারোদের মত মাতৃতান্ত্রিক হলোও ধর্মীয় সহ বেশ কিছু বিষয়ে অন্যদের তুলনায় স্বতন্ত্র। কোচদের ভাষা, দৈহিক গঠন, কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও জীবিকা পদ্ধতি আদিবাসীদেরই ইঙ্গিত বহন করে। পূর্বপুরুষদের ন্যায় পাহাড়ি উপত্যকায় জুম চাষ করে তারা জীবিকা নির্বাহ করে। এ গারো পাহাড়ের উপজাতি অভাব ও দারিদ্র্যের মধ্যে তাদের প্রাচীন সংস্কৃতি ও জীবনবোধ প্রাণপণে ধরে রাখার চেষ্টা করছে।
নিজেদের সামাজিক জীবনের বাইরে এসে তারা আজও দেশের মূল জীবনধারা ও স্রোতের সঙ্গে তেমনভাবে তাল মেলাতে পারছেনা। আদিকাল থেকে উপজাতি কোচরা যে জমির ওপর বসবাস করছে, যে পাহাড়-জঙ্গল কেটে আবাদযোগ্য করছে সেই জমি এখন তাদের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। কাজের অভাবে কোচদের চরম সংকটে সৃষ্টি করেছে। খাড়ামোড়া গ্রামের প্রবীণ নরেছ চন্দ্র কোচ বলেন, ১৯৯০ সালে বন বিভাগ জুম চাষ নিষিদ্ধ করলে বেশীর ভাগ আদিবাসী বেকার হয়ে পড়ে। পাহাড়ের গায়ে তারা ধান মরিচ সিম আদা হলুদ শাকসবজি চাষ করতো। এসবও এখন বন্ধ। এছাড়া এক সময় দক্ষতার সঙ্গে তারা নিজেদের কাপড় নিজেরাই বুনন করত। তাদের বাশঁ শিল্প কাজও ছিল আকর্ষণীয়। পুঁজি সংকট কাচাঁমালের অভাব এবং উৎপাদিত পণ্যের বাজারজাত সমস্যার কারনে সে পেশা ছেড়ে দিয়েছে। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের আগ পর্যন্ত আদিবাসীদের জীবনযাপন ছিল নিরূপদ্রব। তাদের ধারণা ছিল পাহাড়ের জমিজমা গাছগাছালি সবই প্রকৃতির দান এবং এসবের ওপর একমাত্র অধিকার তাদেরই। তাদের এ ধারানা ক্রমাগত আঘাত আসতে শুরু করে ৪৭ সালের পর থেকে ভারত থেকে দলে দলে উদ্বাস্তুরা এসে বলপূর্বক উপজাতিদের জমিজমা জবর দখল করতে শুরু করে। সে সময় নীরব সম্মতিতে তারা উপজাতিদের জমিতে অনুপ্রবেশ করে। ফলে বহিরাগতদের অত্যাচারে আদিবাসীরা দেশ ত্যাগ করে ভারতের আসাম রাজ্য চলে যেতে বাধ্য হয়্। তাদের মধ্যে অনেকেই পরবর্তী সময়ে দেশে ফিরে এসে হারানো ঘরদোর জমিজমা আর পুনরুদ্ধার করতে পারেনি। জমির আইন সম্পদ মালিক ও উত্তরাধিকারীদের অবজ্ঞা করে তাদের জমি অন্যেদের কাছে লিজ দেয়া হয়েছে খাস জমি দেখিয়ে। এদিকে সম্পদ হারানোর যন্ত্রনা বুকে নিয়ে আজও তারা লড়াই করে যাচ্ছে ক্ষুধা দারিদ্রতা সঙ্গে। তারা এখন শ্রম বিক্রিসহ বাংলাদেশ ও ভারতের পাহােিড়র লাকড়ি বিক্রি করে কোন রকমে দিনানিপাত করছে। খাড়ামুড়া গ্রামের শিক্ষক বিরুতী রানী কোচ জানান এই এলাকার আদিবাসীদের শিক্ষার হার খুবই নাজুক। ইচ্ছা থাকলেও অর্থের অভাব যোগাযোগ ব্যবস্থা ও তাদের এলাকায় কোন শিক্ষা প্রতিষ্টান না থাকায় আদিবাসী কোচরা শিক্ষা লাভ করতে পারছেনা।
খাড়ামুড়া গ্রামের অর্থের অভাবে তাদের যুবতী মেয়েদের পাত্রস্থ করতে পারছেনা অনেকে। অনেক কোচ পিতা তাদের ঘরে যুবা মেয়েদের নিয়ে দুঃচিন্তাাগ্রস্ত। পুর্বপুরুষ থেকে এরা সংস্কৃতিমনা। অবসর সময়ে নাচ গানের আয়োজন করে আমেদ ফূর্তি করত। অর্থের অভাবে আগের মত সচারাচর আমোদ ফূর্তি করতে পারছে না। বর্তমান কোচদের প্রায় ঘরে ঘরে অভাব অনটন লেগে আছে।
এসব পপাহাড়িয়া এলাকায় চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। এতে এরা একদিকে অর্থ সংকটে ভুগছে অন্যদিকে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। চিকিৎসা বলতে গাছের লতা-পাতা ,ঝাড়-ফুকই সম্বল।
উপজেলার গারো পাহাড়ের বালিজুরি কোচপাড়া গ্রামের শ্রী প্রমিতা কোচ, দলগুমি কোচ, সূধারানী,কলাবতী,জীরমনি, সহ বোচ নারীরা তাদের নিজস্ব ভাষায় বলেন,লেইক্যা কী অইব? “ নিন্দ্রানি হালসালা হাংগারদা কতগুলো হাল বেদখল দেখে লাঙ্গাতে নে। নিদ্রা কষ্টছি টংট। নিন্দ্রানে কাইয়ুআন চাইচা” অর্থাৎ আমাদেরে অনেক জমি বেহাত হয়েছে। আমরা খুব কষ্টে আছি,আমাদের কেউ দেখে না।


0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন