শ্রীবরদীনিউজটোয়েন্টিফোর
পরিবারে যিনি একজন মা, সংসারে তিনিই একজন গৃহিনী এবং একইসঙ্গে তিনি একজন শিল্পোদ্যোক্তা। একজন নারীর মধ্যে এই তিনের সমন্বয় বাঙলাদেশে এখন আর বিরল ঘটনা নয়। তবে এখনও অনেক কম। যেখানে উন্নত বাজার অর্থনীতিতে মোট ব্যবসা-বাণিজ্যের ২৫ শতাংশেরও বেশি উদ্যোক্তা নারী, সে তুলনায় বাঙলাদেশে নারী উদ্যোক্তা এখনও ১০ শতাংশের কম।
জাতিসংঘের সামপ্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নারীর অগ্রগতির সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। এই বাস্তবতার আলোকে বাঙলাদেশ নারী উদ্যোক্তাদের প্রতি সহায়তার হাত প্রসারিত করেছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্পখাতে সফল নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে গত শনিবার বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমীতে আয়োজন করা হয় এক সমাবেশের। নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে ব্যাংকিং খাতে এটিই বাঙলাদেশের প্রথম সমাবেশ। সারাদেশ থেকে সফল দুইশত নারী উদ্যোক্তা এ সমাবেশে অংশ নিয়েছেন। সমাবেশে ২২টি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। এ ছাড়াও সমাবেশের পাশাপাশি ঋণের অর্থ কাজে লাগিয়ে নারী উদ্যোক্তাদের তৈরি পণ্যও প্রদর্শন করা হয়। ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্প খাতে বিকাশ ঘটিয়ে দেশের উন্নয়ন ঘটানোর স্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে সমপ্রতি বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের মহিলা উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রদানের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
ব্যাংক সমূহকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতে বিতরণকৃত ঋণের মধ্যে ১০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তাদের মাঝে বিতরণ করার নির্দেশনা প্রদান করলেও বাস্তবে তার প্রয়োগ এখনও দেখা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী চলতি বছরে এসএমই খাতে বিতরণকৃত ঋণের মাত্র তিন শতাংশ নারীদের দেয়া হয়েছে। এ সম্পর্কে ব্যাংকগুলোর দাবি মহিলা উদ্যোক্তারা ঋণের জন্য আসেন না। অন্য দিকে মহিলা উদ্যোক্তারা দাবি করেছেন ব্যাংক তাদের ঋণ প্রদানে অনীহা প্রকাশ করেছে।
সমাবেশে অংশগ্রহণকারী নারী উদ্যোক্তাদের দাবী ছিলো মূলত ঋণের সুদের হার কমানো, ঋণের গ্রেস পিরিয়ড বাড়ানো, গ্যারান্টার শর্ত শিথিল করা এবং ট্রেড লাইসেন্স ও টি আই এন নম্বরপ্রাপ্তি সহজ করা। অনুষ্ঠানে আসা নারী উদোক্তারা অভিযোগ করে বলেন যে স্বামীর গ্যারান্টি ছাড়া একাধিক ব্যাংক এসএমই ঋণ দিচ্ছে না। যা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। এক্ষেত্রে যেসব মহিলা উদ্যোক্তার স্বামী নেই তাদের ঋণ গ্রহণেরও সুযোগ থাকল না। এছাড়াও কিছু ব্যাংক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলোতে ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ অমান্য করা হচ্ছে, মহিলাদের গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হচ্ছে না। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উন্নয়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও বাস্তবে তার পূর্ণ প্রয়োগ হচ্ছে না। এসব দাবী দাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সমাবেশে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান নারী উদ্যোক্তাদের ঋণের সুদের হার কমানোর আশ্বাস দেন এবং বলেন নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে কোনো ঋণ খেলাপী নেই । এসএমই প্রসারে এডিবির নতুন তহবিল এসেছে। এ তহবিলে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ১০ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখার চিন্তা ভাবনা চলছে। এসএমই ঋণ গ্রহণে নারী উদ্যোক্তাদের আগ্রহী করে তুলতে সমপ্রতি গ্রুপভিত্তিক ঋণ সুবিধাও চালু করা হয়েছে।
কার্যত নারী উদ্যোক্তা হয়ে উঠার পিছনে বাধা হচেছ পরিবার, সমাজ ও মূলধন। এক জরিপে দেখা গেছে ৩৫ শতাংশ নারী মনে করেন তার, উদ্যোক্তা হয়ে উঠার পিছনে বাধা পরিবার ও সমাজ, কিন্তু ৮৮ শতাংশ নারীই মনে করেন তার উদ্যোক্তা হয়ে উঠার পিছনে মুলবাধা মূলধন।
তাই নারী উদ্যোক্তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গ্রামীণ নারীদের মধ্যেও ঋণের প্রবাহ বাড়াতে হবে। বর্তমানে নারী উদ্যোক্তারা নানা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হলেও ভবিষ্যতে এ কাজে তাদের যাত্রা পথকে সহজ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের পক্ষ থেকে গড়ে তোলা হচ্ছে নানা নিয়ম নীতি। অন্যান্য ব্যাংকসমূহে এসব নীতি প্রথার সুষ্ঠু প্রয়োগই দেশের ভাগ্য উন্নয়নে নারী উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে সাহায্য করবে।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন